ব্যবসা করবেন তিন ভাবে শরীয়ত সম্মত..
বিস্তারিত থাকছে ভিডিওতে
নিজের ব্যবসা শুরু করার আগে যে ছয়টি বাস্তবতা বিবেচনায় রাখতে হবে
একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন অনেক মানুষের মধ্যেই থাকে। নিজে ব্যবসা শুরু করে বড় কিছু অর্জন করা এবং নিজের উদ্যোগটিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে খ্যাতি লাভ করার স্বপ্ন থাকে। ব্যবসায়ে নামার আগে অনেক পরিকল্পনা করা হলেও, বাস্তবে প্রায়ই প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এখানেই কেউ কেউ হোঁচট খান, ব্যবসা ধরে রাখতে পারেন না; আবার কেউ কেউ নিজেদের প্রজ্ঞা ও দক্ষতার জোরে সামনে এগিয়ে যান।
যদিও ব্যবসায়ে লাভ-ক্ষতি খুবই স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু যেকোনো প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরুর আগে সেখানকার অনুকূলতা ও প্রতিকূলতা, দুটি বিষয়েই জেনে নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসায়ে আসলে শতভাগ 'নিখুঁত' বলে কিছু নেই। শুরুর দিকে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে বাধার সম্মুখীন হতে হবেই। তাই স্টার্টআপ প্রফেশনালস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্টিন জুইলিং নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ে নামার আগে ৬টি বাস্তবতার কথা বলেছেন, যেগুলোর জন্য তাদের আগে থেকেই নিজেকে প্রস্তুত রাখা উচিত।
১. 'ইউরেকা' মুহূর্ত বলে কিছু নেই
মার্টিন জুইলিং এর নিজের অভিজ্ঞতা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে পাওয়া ফিডব্যাক অনুযায়ী, তিনি মনে করেন- বেশিরভাগ 'নতুন আইডিয়া বা ধারণা'ই আসলে পুরনো হয়, যেগুলো নিয়ে আগেপরে অনেকে কাজ করেছেন। তাই 'শতাব্দীর সেরা আইডিয়া' নিয়েই যে আপনাকে ব্যবসায়ে নামতে হবে এমনটা নয়।
আগে কেউ কোনোদিন যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করেনি, তেমন অদ্বিতীয় আইডিয়া খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। আপনাকে বুঝতে হবে আপনার আগ্রহ কোন দিকে এবং কোন খাতে আপনি সবচেয়ে সুবিধা করতে পারবেন; সেটিকে কেন্দ্র করেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।
আপনার কাঙ্ক্ষিত 'জাদুকরী আইডিয়া' খুঁজে পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো ব্রেইনস্টর্মিং এর মাধ্যমে আইডিয়া বের করা। আশেপাশের বন্ধুবান্ধব কেউ যদি খুব সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী হয়, তাহলে তার সৃজনশীলতা ও আপনার আগ্রহ-নির্দেশনার সমন্বয়ে একটি দারুণ আইডিয়ার জন্ম হতে পারে।
২. সফলতার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম
মার্টিন জুইলিং বলেন, তিনি 'টেন থাউজ্যান্ড আওয়ারস রুল'-এ বিশ্বাস করেন, যার মানে হলো সবচেয়ে উদ্যমী উদ্যোক্তারা তার কাজের পেছনে সাধারণ মানুষদের চেয়ে বেশি শ্রম ও সময় দেন। সময় অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস, তাই অর্থহীন কাজে বা দিবাস্বপ্ন দেখে একটি মিনিটও ব্যয় না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
উদাহরণস্বরূপ, বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে বিল গেটস একটা সাধারণ অপারেটিং সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং মাইক্রোসফট দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিলিয়নিয়ার ও সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার আগে বিল গেটস কম্পিউটার রুমে সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে হাজার হাজার ঘণ্টা পার করেছেন।
৩. নিজেকে জানা এবং ঘাটতি পূরণের জন্য সাহায্য নেওয়া
কোনো মানুষের মধ্যেই একটি নতুন আইডিয়া দাঁড় করানো এবং নতুন ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার মতো সব রকম দক্ষতা একসাথে থাকে না। সবার মধ্যেই কোনো না কোনো কমতি রয়েছে। তাই সবার আগে নিজের দুর্বলতা, কোথায় ভালো কাজের সুযোগ আছে এবং কোথায় ঝুঁকি আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সফল ব্যবসা দাঁড় করাতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও লোকবল অন্বেষণ করতে করতে হবে।
অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে এমন কাউকে সঙ্গী হিসেবে নিলে ভালো হয় যাতে একজনের ঘাটতি অন্যজন পূরণ করতে পারে।
৪. দল গঠন করা এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা
কোনো ব্যবসাই একা চালানো সম্ভব নয়। ব্যবসায়ে কোনো সমস্যায় পড়লেও একা সবকিছুর সমাধান করাটা কঠিন। তাই ব্যবসায়ে সফলতা পেতে হলে আপনার দরকার একটা ভালো ও পরিশ্রমী দল- পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে এ ধরনের মানুষদের আপনি দলে যুক্ত করতে পারেন। তাই এখন থেকেই বড় পরিসরে নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ভাবতে হবে।
শুধুমাত্র নতুন কাজের পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় না থাকায় নতুন ব্যবসায়ীরা প্রায়ই যে ভুলটি করেন তা হলো- বাইরের উপদেষ্টা এবং নিজের দলের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগের সূত্র হারিয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, মানুষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত করার জন্যও সপ্তাহে একটা সময় নির্দিষ্ট করে রাখা।
৫. সঠিক বিনিয়োগকারী খোঁজা
বেশিরভাগ সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের কাছেই পকেটভর্তি টাকা থাকে না তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য। সেজন্য তাদের বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন হয়। সঠিক বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়ার ওপর নির্ভর করে যে আপনি ব্যবসায়ে সফল হবেন নাকি ধাক্কা খাবেন।
বিনিয়োগের জন্য সঠিক মানুষ খুঁজে পাওয়া, টাকা চাওয়ার আগেই তাদের সাথে একটা উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের ভরসা-বিশ্বাস অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়ার পর তার পেছনেও আপনাকে ততটাই শ্রম দিতে হবে যতটা সে আপনার প্রতিষ্ঠান এবং আপনার দলের পেছনে দিচ্ছে। তা নাহলে পরে দেখা যায়, অনেক উদ্যোক্তাই বিনিয়োগকারীদের নানা শর্ত ও চাহিদা দেখে অবাক হন।
৬. ভাগ্যে বিশ্বাস করা
যে যাই বলুক না কেন, স্টার্টআপ প্রফেশনালস এর সিইও মার্টিন জুইলিং মনে করেন, ব্যবসায়ে ভাগ্য অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর। এমনকি কখনো কখনো ভাগ্য খারাপ হলেও, যেমন, অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক মোড় পরিবর্তন বা নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আগমন; এগুলোও মানুষের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি করে এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে শেখায়। এছাড়া, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও নিজের ভাগ্য নিজেই প্রসন্ন করে তোলা সম্ভব।
তবে শেষ কথা হলো, ব্যবসা ক্ষেত্রে কঠিন বাস্তবতার কাছে হার মেনে নিজের স্বপ্ন নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। তার চেয়ে বরং আসন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকলে তা মোকাবিলা করা কিছুটা সহজ হবে।
0 Comments